বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৫

দেশের মঙ্গলের জন্য দ্রুত নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

Share

দেশ বর্তমানে এক গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বহীন আচরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। দেশের জনগণের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। তাদের মতে, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হবে।

রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস) আয়োজিত ‘জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।

বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য।

বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ঐক্য নষ্টের নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগই প্রথম রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল গঠন করেছিল। পরবর্তীতে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জনগণ ‘দুঃশাসনের’ বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেটিই এখন গণ-অভ্যুত্থানের রূপ নিয়েছে। এই ঐক্য ধরে রাখা এখন সময়ের দাবি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে বলেন,

“আমরা জাতি হিসেবে গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, সংগ্রাম করেছি, এমনকি প্রাণও দিয়েছি; কিন্তু গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ পাইনি। পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত বারবার গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে।”

তিনি শহীদদের স্মরণ করে বলেন, “তাঁরাই আমাদের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণেই আজ আমরা এই দুর্দশায় পড়েছি। এখন আমাদের দায়িত্ব—যে যেখানে আছি, সেখান থেকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন,

“যত দ্রুত আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব, ততই দেশের মঙ্গল হবে। হতাশার কিছু নেই, বরং এখনই সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার।”

‘বিএনপি সংস্কারের পক্ষে নয়’—এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “সংস্কারের সূচনা বিএনপিই করেছিল। সবাই সব বিষয়ে একমত না হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। সেই পার্লামেন্টই অমীমাংসিত জাতীয় ইস্যুগুলোর সমাধান দেবে, কারণ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন,

“আমরা কি শুধু আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা করছি, নাকি সার্বিকভাবে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবছি? জাতীয় ঐক্যের নামে যেন আবার বাকশালের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গণতান্ত্রিক সমাজে মতপার্থক্য থাকবেই। কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে বিদ্রোহী ভাবা ঠিক নয়। ঐকমত্য চাপিয়ে না দিয়ে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখেই এগোতে হবে।”

Read more

Local News