সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

সিন্ডিকেট ভাঙতে নতুন নীতিমালা: সারের ডিলারশিপে

শেয়ার করুন

সারের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য ও সিন্ডিকেট ভাঙতে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ-সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কৃষিবিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটিতে অনুমোদনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এটি বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগামী রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে এই নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে।

নতুন এই নীতিমালায় স্বচ্ছ দরপত্র, ডিজিটাল নজরদারি, ডিলার নিয়োগে নতুন যোগ্যতা নির্ধারণ, এক পরিবারে একাধিক ডিলারশিপ নিষিদ্ধকরণ এবং বহুল প্রচলিত সাব-ডিলার প্রথা বাতিলের মতো বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এই নীতিমালার মূল লক্ষ্য হলো প্রভাবশালী চক্রের অবৈধ মজুতদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরি বন্ধ করা, যার ফলে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হতে হতো।

এই নীতিমালার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলা ডিলারশিপের দ্বৈত কাঠামো (বিসিআইসি ও বিএডিসি) একীভূত করে এক ছাতার নিচে আনা হয়েছে।

  • এখন থেকে সরকারি, আধাসরকারি বা বেসরকারি— যে উৎস থেকেই সার আসুক, তা একক নীতিমালার আওতায় বিতরণ হবে।
  • আগের মতো ‘বিসিআইসি ডিলার’ ও ‘বিএডিসি ডিলার’ নামে কোনো বিভাজন থাকবে না। ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া উভয় ধরনের সার বরাদ্দ একক ব্যবস্থাপনায় হবে।
  •  মন্ত্রণালয় বলছে, এর মাধ্যমে বহু বছরের ‘মনোপলি সিন্ডিকেট’ ভাঙার পথ তৈরি হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে সারের ডিলার ইউনিটের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ডিলারদের জন্য নতুন যেসব নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে:

  • বিক্রয়কেন্দ্র: প্রতিটি ডিলারের অধীনে তিনটি নির্দিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে।
  • তথ্য প্রদর্শন: বিক্রয়কেন্দ্রে সরকারি ভর্তুকি ও বিক্রয়মূল্যসহ সব তথ্য প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
  • ডিজিটাল হিসাব: বিক্রয়, উত্তোলন ও হিসাবরক্ষণ ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • এলাকাভিত্তিক বিক্রয়: ডিলার নিজ এলাকায় নির্ধারিত কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও সার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।
  • জামানত বৃদ্ধি: ডিলারশিপ জামানত দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়েছে এবং নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা।

  • সরকারি কর্মচারী
  • জনপ্রতিনিধি
  • ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি
  • একই পরিবারের একাধিক সদস্য

অনিয়ন্ত্রিত সাব-ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তবে বিদ্যমান সাব-ডিলার বা খুচরা বিক্রেতারা ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরোনো নিয়মে সার কেনাবেচা করতে পারবেন। এরপর এ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে।

কৃষি সচিব ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান গনমাধ্যমকে বলেন, “আমরা পুরো ডিলার ব্যবস্থাকে কৃষকবান্ধব করেছি। এখন থেকে সরকার নির্ধারিত দামে কৃষক সার পাবেন; ডিলারকেই জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এ নীতিমালার ফলে ডিলারদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে নীতিমালা মেনে চলতে হবে।”

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম এই নীতিমালাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, “ডিলার বাড়লে কৃষকের জন্য সারপ্রাপ্যতা বাড়বে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিলারশিপ থাকলে স্বচ্ছতাও বাড়বে।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএইচএম সাইফুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, “ডিলার বাড়লে প্রতিযোগিতা বাড়বে, মনোপলি কমবে। তবে ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করাই বড় চ্যালেঞ্জ।”

সাম্প্রতিক খবর

এই বিভাগের আরও খবর