সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

আমনের বাম্পার ফলনে সুনামগঞ্জের কৃষকের মুখে হাসি

শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার ধানের আশাতীত ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ইতোমধ্যে জেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার চালের হিসাবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে, যার বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকারও বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ৮২ হাজার ৬শ’ ৫৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঊফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা (চালের হিসাবে) নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৯শ’ ৯৭ মেট্রিক টন। উৎপাদিত এ চালের আনুমানিক বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

 গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন

শনিবার (১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার মোট আবাদের ১১.৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকরা এখন পুরোদমে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই জেলার সকল জমির ধান কাটা সম্পন্ন হবে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাওর ও মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটা ও মাড়ায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণিরা। বাম্পার ফলনে তাদের চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। তবে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, এবার আমনের বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণের সময় কোনো সমস্যা হয়নি। অন্য বছর আমন আবাদের সময় ভারি বৃষ্টি, বন্যাসহ নানা দুর্যোগে বিপাকে পড়েন কৃষক। এবার তেমন সমস্যা হয়নি। এর ফলে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

সদর উপজেলার ব্রাক্ষণগাঁও গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, এবার ধানের গাছ খুব পুষ্ট হয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম ছিল। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ভালো ফলন হইছে। ঠিকমতো ধান ঘরে তুলতে পারলে আর ভালো দাম পেলে আমরা লাভবান হব। একই গ্রামের আরেক কৃষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, হাইব্রিড জাতের ধান চাষাবাদ করেছিলাম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও খুব ভালো হয়েছে। এখন ধান কাটা শুরু করেছি। আশা করছি, ভালো দাম পেয়ে লাভবান হব।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। কেয়ার প্রতি ১৯-২০ মন ধান হয়েছে। আমি এ বছর ৮ কেয়ার জমিতে ধান চাষাবাদ করেছি। চলতি সপ্তাহে ধান কাটা শুরু করব। আশা করি এবার লাভবান হব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত নির্বাচন, সঠিক রোপন প্রক্রিয়া, সময়মতো জমিতে সার ও কীটনাশক দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই এবার ভালো ফলন সম্ভব হয়েছে, যা জেলার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় আমনের ভালো ফলন হয়েছে। এ সফলতার পেছনে সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের জন্য যথাসময়ে সার ও বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করেছি, যার ফলশ্রুতিতে কৃষকরা ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের আশ্বস্ত করতে চাই- ধান কাটা ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় তাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। আমনের ভালো ফলন হওয়ায় জেলার খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সাম্প্রতিক খবর

এই বিভাগের আরও খবর