বাংলাদেশে হাঁস পালন দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় খাত। সাধারণত মানুষ মনে করে হাঁস পালন মানেই পুকুর, খাল বা জলাশয় প্রয়োজন কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত ব্যবস্থাপনা এখন প্রমাণ করছে, জলাশয় ছাড়াই সফলভাবে হাঁস পালন সম্ভব। এই পদ্ধতিকে বলা হয় শুকনো হাঁস পালন ব্যবস্থা বা ড্রাই রিয়ারিং সিস্টেম।
জলাশয় না থাকলেও হাঁস পালনে অসুবিধা নেই
হাঁসের স্বভাবগতভাবে পানির প্রয়োজন থাকলেও প্রতিদিন সাঁতার না পেলেও তারা সুস্থ থাকে। শুধু পানির পাত্রে মাথা ডুবিয়ে খাবার গলধঃকরণ ও ঠোঁট পরিষ্কার করার সুযোগ থাকলেই তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। তাই পুকুর বা খাল না থাকলেও সীমিত পানির ব্যবস্থায় হাঁস পালন করা যায়।
খামারের নকশা ও পরিবেশ
শুকনো হাঁস পালনে একটি আধুনিক খামারের প্রয়োজন হয়, যেখানে—
- উঁচু মাচা বা বাঁশ/ঝাঁপি দিয়ে বিছানা তৈরি করা হয়
- নিচে ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে
- ভালো বায়ু চলাচল ও আলো থাকে
- হাঁটার জায়গা ও ছোট পানির পাত্র রাখা হয়
অনেক খামারে খাচায় বা আধা-মুক্ত পরিবেশে হাঁস পালন করা হয়, যেখানে হাঁসের পা ও পালক শুকনো থাকে বলে রোগ কম হয়।
খাবার ব্যবস্থাপনা
পানি ছাড়া হাঁস পালনে খাবারই মূল ভূমিকা পালন করে।
- বাজারে পাওয়া হাঁসের লেয়ার বা ব্রয়লার ফিড ব্যবহার করা হয়
- শস্য, ভাঙ্গা চাল, গম, ভুট্টা, খইল সব মিলিয়ে পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া হয়
- সবসময় পানির পাত্রে পরিষ্কার পানি রাখতে হয়, যাতে হাঁস মাথা ডুবিয়ে খেতে পারে
রোগ-বালাই কম
জলাশয়ে নানা রকম জীবাণু থাকার কারণে হাঁস বেশি অসুস্থ হয়। শুকনো পালনে
- ফ্লু, পা-পচা, পরজীবীসহ অনেক রোগের ঝুঁকি কমে
- খামার পরিষ্কার রাখা সহজ হয়
- মৃত্যু হার কমে, ফলে আয় বাড়ে
ডিম ও মাংস উৎপাদনে ভালো ফলন
গবেষণায় দেখা গেছে, পানি ছাড়া হাঁস পালনে
- ডিম দেওয়ার হার প্রায় একই থাকে
- হাঁস কম শক্তি খরচ করে, তাই খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা (FCR) ভালো হয়
- ওজন দ্রুত বাড়ে
- পরিচর্যা সহজ হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমে
অনেক খামার এখন আধুনিক ড্রাই রিয়ারিং সিস্টেমে হাঁস পালন করে বাজারে ডিম সরবরাহ করছে।
যাদের জমি বা পুকুর নেই, তাদের জন্য আদর্শ পদ্ধতি
যারা শহরে বা গ্রামে পুকুরবিহীন পরিবেশে হাঁস পালন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি লাভজনক সুযোগ
- কম জায়গায় খামার করা যায়
- ছাদে বা উঠানেও পালন সম্ভব
- আয়ের পাশাপাশি পরিবারে ডিমের চাহিদাও মেটে
পানি ছাড়া হাঁস পালন এখন আর কেবল পরীক্ষামূলক ধারণা নয়, এটি একটি জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে পরিণত হচ্ছে। সঠিক খাবার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নিয়মিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছোট খামার থেকে শুরু করে বড় প্রকল্প সবখানেই এই পদ্ধতিতে সফলতা পাওয়া সম্ভব।


