রূপবান শিম চাষ
রূপবান শিম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি, যা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বাজারে ভালো চাহিদাসম্পন্ন। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যায় সহজেই বাড়ির আঙিনা, জমি কিংবা বাঁশের মাচায় রূপবান শিম চাষ করা যায়। নিচে রূপবান শিম চাষের পদ্ধতি, পরিচর্যা ও ফলন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাটি ও পরিবেশ
- দো-আঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি রূপবান শিমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
- পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো হতে হবে।
- রোদযুক্ত খোলা জায়গা শিম গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বীজ বপনের সময়
- আগাম জাতের জন্য আগস্ট–সেপ্টেম্বর।
- সাধারণ মৌসুমি চাষের জন্য সেপ্টেম্বর–অক্টোবর।
- গ্রীষ্মকালীন চাষে মার্চ–এপ্রিলেও বপন করা যায়।
জমি প্রস্তুতি
- ৩০–৪০ সেমি গভীরে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে।
- প্রতি শতকে ২০–২৫ কেজি গোবর সার মাটির সঙ্গে মিশাতে হবে।
- বেড আকারে জমি তৈরি করলে পানি ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।
বীজ বপন পদ্ধতি
- বেড বা জমিতে ২–৩টি করে বীজ ৫০–৬০ সেমি দূরত্বে বপন করতে হবে।
- বীজ বপনের পর হালকা পানি দিতে হবে।
- অঙ্কুরোদ্গমের পর প্রয়োজন অনুযায়ী গাছের চারা রোপন করতে হবে।
মাচা তৈরি
রূপবান শিম লতানো গাছ, তাই শক্ত মাচা বা বাঁশের খুঁটি প্রয়োজন।
- ৬–৭ ফুট উঁচু বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচা তৈরি করুন।
- লতা ওঠার সুবিধার্থে জালের মতো বুনন রাখুন।
সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি শতকে—
- ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম
- টিএসপি ২৫০ গ্রাম
- এমওপি ২০০ গ্রাম
গাছের বয়স অনুযায়ী ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে।
গোবর সার বা কম্পোস্ট বছরে একবার বেশি দিলে ফলন বাড়ে।
সেচ ও নিস্কাশন
- শুকনো মৌসুমে ৭–১০ দিন পরপর হালকা পানি দিতে হবে।
- পানি জমে থাকা যাবে না, এতে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে।
রোগবালাই ও দমন
সাধারণ রোগ:
- পাতা পুড়ে যাওয়া রোগ
- শুঁয়োপোকা
- বীজ পচা রোগ
দমন ব্যবস্থা:
- আক্রান্ত অংশ ছেঁটে ফেলা
- জীবাণুনাশক বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার
- সঠিক পানি নিষ্কাশন রাখা
ফলন সংগ্রহ
- বপনের ৬০–৭০ দিন পর থেকে শিম তুলতে শুরু করা যায়।
- কচি সবুজ ও কোমল শিম বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়।
- নিয়মিত তোলায় গাছে আরো ফল আসে।
ব্যবসায়িক সম্ভাবনা
রূপবান শিম দীর্ঘ সময় ধরে ফল দেয়, ফলে এক মৌসুমে ভালো লাভ পাওয়া যায়। বাজারে এর চাহিদা স্থায়ী, তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে।


