নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রথাগত জমিতে লাউ চাষের পাশাপাশি এখন কৃষকরা ঝুঁকছেন বিকল্প পদ্ধতির দিকে। জায়গার অভাব, জমির উর্বরতা কমে যাওয়া এবং বাড়তি উৎপাদনের লক্ষ্য থেকে অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন বস্তায় লাউ চাষ যা স্বল্প জায়গায় বেশি ফলনের এক কার্যকর উদ্ভাবন।
বস্তায় লাউ চাষ সহজ, সাশ্রয়ী ও ফলনদায়ী
শহর বা গ্রামে ছোট আঙিনা, বাড়ির ছাদ কিংবা অব্যবহৃত কোনো কোণা যেকোনো স্থানে বড় জুট বা প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করেই লাউ চাষ করা যায়। প্রতি বস্তায় ৩০–৩৫ কেজি মাটি, কেচেড়া সার, জৈব সার ও বালি মিশিয়ে তৈরি করা হয় হালকা ও উর্বর মাধ্যম। এরপর প্রতিটি বস্তায় ১–২টি উন্নতমানের লাউয়ের বীজ বপন করা হয়।
চাষিরা জানান, এই পদ্ধতিতে গাছ মাটির রোগ-বালাই থেকে তুলনামূলক নিরাপদ থাকে। বৃষ্টিতে পানি জমে থাকা বা জমি নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। নিয়মিত সেচ, আগাছা পরিষ্কার ও লতার জন্য নেট বা বাঁশের মাচা করে দিলেই গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।
ফলন বেশি, খরচ কম
বিশেষজ্ঞদের মতে, বস্তায় চাষে উৎপাদন খরচ ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একই সঙ্গে প্রতি বস্তা থেকে মৌসুমভেদে ৮–১২টি পর্যন্ত লাউ সংগ্রহ করা সম্ভব। গাছ রোগে আক্রান্ত হলে সহজেই বস্তা আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া যায়, যা সমগ্র ক্ষেতের ক্ষতির ঝুঁকি কমায়।
শহর কৃষিতেও সম্ভাবনা
বস্তায় লাউ চাষ শুধু গ্রামীণ কৃষকের জন্য নয়, শহরের ছাদকৃষিতেও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সীমিত জায়গায় পরিবারের চাহিদা পূরণ তো হয়ই, পাশাপাশি অতিরিক্ত লাউ স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করা যায়। এতে বাড়তি আয় হয় কৃষকের।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বস্তায় সবজি চাষ নিয়ে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে দেশের সবজি উৎপাদনে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
স্বল্প জায়গায় বেশি ফলন, কম খরচ এবং ঝুঁকি কম সব মিলিয়ে বস্তায় লাউ চাষ এখন কৃষকদের কাছে সম্ভাবনাময় বিকল্প পদ্ধতি। সঠিক পরিচর্যা ও সঠিক জাত ব্যবহারে এই চাষ পদ্ধতি ভবিষ্যতে আরও জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।


