প্রকৌশলে ডিপ্লোমা করেছেন হলামাংসিং মারমা। বয়স তিরিশের কোঠায়। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ গ্রামে কৃষিকাজ করাকেই জীবিকার পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। এলাকায় এখন তাঁর রয়েছে ১০ একরের পেঁপেবাগান। এর সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে তরমুজ, মুলা, মরিচ, করলাসহ নানা শাকসবজি চাষাবাদ করেন তিনি।
হলামাংসিংয়ের বাড়ি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরের দুর্গম গ্রাম দূরছড়িতে। গ্রামটিতে বসবাস করে ৫৩টি পরিবার। এর মধ্যে ৪২টি পরিবারই হলামাংসিংয়ের অনুপ্রেরণায় করেন পেঁপে চাষ। কম খরচ ও অল্প পরিচর্যায় ভালো লাভ হওয়ায় এলাকাটিতে দিন দিন বাড়ছে পেঁপেচাষির সংখ্যা।
হলামাংসিং জানান, ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রকোপের সময়টাতেই তিনি এলাকায় ফলদ বাগান করা শুরু করেন। নিজের জমির পাশাপাশি বর্গা জমি নিয়ে ফলদ বাগান করেছেন তিনি। পেঁপে ছাড়াও মাল্টা, ড্রাগন, লেবু, লটকন, আমের বাগান রয়েছে তাঁর। তাঁকে দেখে এলাকার মানুষও ফলদ বাগানে আগ্রহী হয়েছেন। তুলনামূলক সহজ হওয়ায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন পেঁপে চাষ করছেন। চাষিদের সবাইকে বিনা মূল্যে পেঁপের চারা দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন হলামাংসিং। পাশাপাশি চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিচ্ছেন তিনি।
আগে পাইকারেরা গ্রামে এসে পেঁপে কিনে নিয়ে গেলেও এখন হলামাংসিং নিজে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে ভালো দাম পাওয়া যায় না। তাই ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করি। ঢাকার কিছু সুপারশপও আমাদের কাছ থেকে পেঁপে কিনে নেয়।’ গ্রামে আকারভেদে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা পর্যন্ত পেঁপে বিক্রি হয় জানিয়ে হলামাং বলেন, ‘গ্রামের অন্য যাঁরা আছেন তাঁদের পেঁপেও বেশি দামে আমি কিনে নিই। এতে তাঁরা স্থানীয় বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দাম পান, আমিও লাভবান হই।’
গ্রামে পেঁপেচাষিদের একজন মংসানাই মারমা। তিনি পেশায় জুমচাষি। মংসানাই বলেন, আগে পরিবারের চাহিদা মেটাতে ঘরের পাশের জমিতে দু-একটি পেঁপের চারা ছিল তাঁর। আড়াই বছর আগে থেকে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ শুরু করেছেন। হলামাংসিংয়ের অনুপ্রেরণায় তাঁর কাছ থেকে চারা নিয়ে তিনি বাড়ির পাশের পাহাড়ি ঢালু জমিতে দেড় হাজার পেঁপেগাছ লাগিয়েছেন। পেঁপে বিক্রির পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে লাগানো মরিচ, বেগুন, চুকুর, ঢ্যাঁড়স থেকেও ভালো আয় হয় তাঁর।
দূরছড়ি গ্রামের বাসিন্দা চাইহ্লাপ্রু মারমার মূল পেশা মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন। বাড়তি আয়ের জন্য বাড়ির আশপাশে পেঁপের চারা লাগিয়েছেন তিনি। প্রায় ২০০টির মতো পেঁপেগাছ রয়েছে তাঁর। চাইহ্লাপ্রু বলেন, ‘আগে বাড়ির পাশের এসব জমি খালি পড়ে থাকত। হলামাংসিংয়ের কাছ থেকে কিছু চারা নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেছিলাম। এখন প্রতি সপ্তাহেই কেবল পেঁপে বিক্রি করে হাজার টাকার বেশি আয় হয়।’
গ্রামের বাসিন্দা সুইপ্রমং মারমার রয়েছে আড়াই হাজারের বেশি পেঁপেগাছ। তিনি বলেন, পাহাড়ি জমিতে পেঁপেগাছ লাগিয়েছেন কয়েক বছর আগে। পেঁপে বিক্রি করে এখন ভালো আয় হচ্ছে। হলামাংসিং তাঁকে সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন।
জানতে চাইলে মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান বলেন, হলামংসিং মারমার মতো শিক্ষিত তরুণেরা চাষাবাদে এগিয়ে আসায় অন্য বাসিন্দারাও উৎসাহিত হচ্ছেন। হলামাংসিংয়ের কারণে দূরছড়ি গ্রামটিতে এখন ফাঁকা জমি আর নেই, সবখানেই চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে গ্রামের মানুষ সহযোগিতা চাইলে তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
সূত্র: প্রথম আলো

