বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করেছে। জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। ফলে, প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে এসে যথাযথ সেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলার রোগীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ধুনট, নন্দিগ্রাম ও গাবতলী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষও এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। পাশাপাশি, উপজেলা শহরের মাঝ দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় আহত রোগীরাও দ্রুত চিকিৎসার আশায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করেন। ফলে, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে সার্বিকভাবে সেবার মান ব্যাহত হচ্ছে।
যদিও এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার অবকাঠামো উদ্বোধন করা হয়েছে, বাস্তবে এখনো ৩১ শয্যার সুযোগ-সুবিধাই চালু রয়েছে। শয্যা বৃদ্ধি হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় সম্প্রসারিত কাঠামো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রতি মাসে গড়ে আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ১ হাজার ৪২০ জন রোগী, বহির্বিভাগে ২৬ হাজার ১৪৩ জন এবং জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ২৪০ জন রোগী। এছাড়া, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৬ জন, মিডওয়াইফ ৪ জন, রেডিওলজিস্ট ১ জন, ল্যাব টেকনোলজিস্ট ২ জন ও ফার্মাসিস্ট ২ জন থাকলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে সবকিছু পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালটি পরিচ্ছন্ন ও মনোরম পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন, আলোর ব্যবস্থা, লাইট ও ফ্যানের প্রাপ্যতা সবই সন্তোষজনক।
সেবা নিতে আসা রুহুল কবির বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ খুবই ভালো। সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা পেতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়।
শেরপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক জানান, শেরপুর উপজেলায় প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই সরকারি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায়, সরকারি হাসপাতালই তাদের প্রধান ভরসা। কিন্তু ডাক্তার সংকটের কারণে সেই ভরসা এখন দুর্ভরতায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার প্রায় আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। অনেক রোগীকে মেঝেতে ও বারান্দায় বিছানা পেতে থাকতে দেখা যায়। চিকিৎসক ও নার্সরা সীমিত জনবল নিয়ে দিনরাত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেশি। ডাক্তার কম থাকায় প্রতিদিনই অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে যেন কেউ চিকিৎসা বঞ্চিত না হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, এটা সত্যি যে চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন আউটডোরে সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাই আরও চিকিৎসক প্রয়োজন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

