নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির অভূতপূর্ব জয় ইহুদি ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে গভীর বিভাজন তৈরি করেছে। এই বিভাজন আগামী বছরগুলোতে দেশটির বৃহত্তম ইহুদি জনসংখ্যাবিশিষ্ট মহানগরের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করতে পারে।
৩৪ বছর বয়সী মুসলিম অভিবাসী ও ডেমোক্র্যাটিক সমাজতন্ত্রী মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে পরাজিত করেছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ফিলিস্তিন সমর্থনের অভিযোগের মধ্যে তিনি নিজেকে দৃঢ়ভাবে নিরাপদ রেখেছেন।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে তরুণ ইহুদি ভোটারদের মনোভাব বদলেছে। গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে ক্ষুব্ধ বহু মার্কিন ডেমোক্র্যাট ও তরুণ ইহুদি ভোটাররা মামদানিকে সমর্থন করেছেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনে তার প্রকাশ্য সমর্থনও রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের নিচের মাত্র ৫০% ইহুদি আমেরিকান ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার পক্ষে, যেখানে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ৬৮% সমর্থন জানান। নিউইয়র্ক নির্বাচনী এক্সিট পোল অনুযায়ী, ইহুদি ভোটারদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই মামদানিকে ভোট দিয়েছেন।
নির্বাচনের পর মামদানি ব্রুকলিনের এক ইহুদি স্কুলে অ্যান্টিসেমিটিক গ্রাফিতি ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মেয়র হিসেবে তিনি ইহুদি প্রতিবেশীদের পাশে থাকবেন।
তাঁর বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, তিনি কখনো ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগান নিন্দা করেননি। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, নিজে এই শব্দ ব্যবহার করবেন না এবং অন্যদেরও তা করতে উৎসাহ দেবেন না।
অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগ (এডিএল) ‘মামদানি মনিটর’ চালু করেছে, যা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে ইহুদি সম্প্রদায়ের ক্ষতির আশঙ্কা খতিয়ে দেখবে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদি ভোটারদের রিপাবলিকান দলে টানার চেষ্টা করছেন। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস ৭৯% শ্বেতাঙ্গ ইহুদি ভোট পেয়েছিলেন।
মামদানির প্রচারণার মূল ইস্যু ছিল উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় ও ব্যয়বহুল শহরজীবন, যা তরুণ প্রগতিশীল ভোটারদের আকর্ষণ করেছে। ইহুদি সমর্থকরা বলেন, তার ফিলিস্তিন ইস্যুতে অবস্থানই তাদের সমর্থনের প্রধান কারণ। অন্যদিকে প্রো-ইসরায়েল ভোটাররা উদ্বিগ্ন।
বিভাজিত ইহুদি ভোটব্যাংক এবং গাজা যুদ্ধের প্রভাব নিউইয়র্কের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন এনেছে। মামদানি বারবার অ্যান্টিসেমিটিজম মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ব্রুকলিনের রাব্বি আন্দ্রু কাহন বলেন, “আমাদের উচিত তাকে কাজের সুযোগ দেওয়া এবং সংহতি গড়ে তোলা, যা নিউইয়র্কের সব নাগরিককে নিরাপদ রাখবে।”

